সুন্দরবন দিবস-২০২০ পালন উপলক্ষ্যে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও গ্রীন ভয়েসের যৌথ উদ্যোগে ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে, শাহবাগ, ঢাকায় “ সুন্দরবনে উজানের মিঠা পানির প্রবাহ হ্রাস, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ক্ষতিকর সকল প্রকল্প ও বিষ দিয়ে মৎস নিধন ” এর প্রতিবাদে এক নাগরিক সমাবেশ ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়।
বাপা’র নির্বাহী সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল মতিন এর সভাপতিত্বে এবং বাপা যুগ্ম সম্পাদক ও গ্রীন ভয়েসের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আলমগীর কবির এর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন, বাপা’র সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ন কবির সুমন, সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস্ মুভমেন্ট এর নির্বাহী প্রধান এডভোকেট মোঃ মোজাহেদুল ইসলাম মুজাহিদ, বাপা জীবন সদস্য মো. রেজাউল করিম, গ্রীন ভয়েস মহানগরের সমন্বয়ক আব্দুস সাত্তার, গ্রীন ভয়েস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইসরাত প্রমূখ।
সমাবেশে বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, নির্বাহী সদস্য রুহীন হোসেন প্রিন্স, ইবনুল সাঈদ রানাসহ আয়োজক সংগঠনসমূহের প্রতিনিধিগণ ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিগন অংশ গ্রহন করেন। সমাবেশ শেষে এক সংক্ষিপ্ত র্যালী অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. মো. আব্দুল মতিন বলেন, আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী-সুন্দরবন দিবস। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কর্তৃক ২০০২ সালে খুলনায় আয়োজিত সুন্দরবন সম্মেলনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখা ও এর ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ও বাংলাদেশের অনন্য সম্পদ দেশের দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলে বিস্তৃত শ্বাসনালীর জলাবন (ম্যানগ্রোভ) সুন্দরবনের সর্বশেষ পরিস্থিতির ভিত্তিতে বন রক্ষার দাবীতে সোচ্চার থাকতে বাপা সহ ৫৩টি সংগঠন সমন্বয়ে নানাবিধ কর্মসুচী আয়োজন করা হয়।
অগণিত দেশ ও প্রকৃতি প্রেমীর কাছে সুন্দরবনের প্রতি মমত্ববোধ ও ভালবাসা, অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে এ দিবসটির গুরুত্ব আজ অপরিসীম। ২০০২ সালে সুন্দরবন সম্মেলনের মাধ্য দিয়ে দিবসটি ঘোষিত হয়েছিল। চলমান ‘মুিজব বর্ষে’ আমরা সুন্দরবন বিষয়ে জাতির পিতার দিক নির্দেশনার ভিত্তিতে কর্মসূচি গ্রহন করব, বন রক্ষার আন্দোলনকে আরো জোরদার করব।
শরীফ জামিল বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মত। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঝড় থেকে সুন্দরবন আমাদেরকে বুক দিয়ে আগলিয়ে রাখে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক মন্তব্য করে গেছেন যে “সুন্দরবন রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশকে রক্ষা করার কোনো উপায় নেই”। সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার প্রধান রক্ষাকবচ হিসেবেও তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু। শুধু তাই নয় জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়েও দেশবাসীকে সতর্ক করেন সাবেক এই মহান নেতা।
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন হচ্ছে আমাদের রক্ষা কবজ। এটাকে রক্ষা করতে হবে। আজ আমরা এখানে উপস্থিত হয়েছি সেই বনকে রক্ষা করার জন্য যেটা আমাদেরকে আইলা, সীডরসহ বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ঘুর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করেছে মাতৃত্বের মমতায়। সেই বনকে যখন ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে, তখন পরিবেশবাদীদের হৃদয়ে আঘাত লাগে।
সুন্দরবন দিবসে আজ আমাদের দাবীসমূহ :
× উজানের বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সফল আলোচনার মাধ্যমে সুন্দরবনের জন্য মিঠা পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। × রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মান কাজ বাতিল করতে হবে। × সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী বা অভ্যন্তরের নির্মাণাধীন ও পরিকল্পিত সরকারী-বেসরকারী সব প্রকল্প ও স্থাপনা নির্মান অবিলম্বে বন্ধ, বাতিল ও অপসারণ করতে হবে। × বনের পাশ ঘেঁষে বরাদ্দকৃত সকল শিল্প ও আবাসন প্লট বাতিল করতে হবে। × অপরিকল্পিত গাছকাটা, পশু-পাখী হত্যা ও মাছ ধরা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বনের গাছে অগ্নি সংযোগ এবং বিষ প্রয়োগে জলজ প্রাণী ও মাছ হত্যা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। × সুন্দরবনের মধ্যকার নৌ-চলাচল হ্রাস, নৌ-দূর্ঘটনা প্রশমণ, নদীর তলায় ডুবে থাকা নৌ-যান অপসারণ করতে হবে; × সুন্দরবনে পর্যটক সংখ্যা সীমিত করতে হবে; জলাধার দূষণ ও চিংড়ি চাষ বন্ধ করতে হবে, ও সকল পোল্ডার অপসারণ করতে হবে। × সুন্দরবন-নির্ভর দরিদ্র ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক শিক্ষা ও প্রয়োজনীয় ভিন্ন প্রকৃতির জীবিকার ব্যবস্থাকরতে হবে। × বন বিভাগের জনবল বৃদ্ধি ও তাদের কাজের পরিধি, একাগ্রতা, সক্ষমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা