ফুল - দই গোটা : (ছবি : মো. আলী আশরাফ খান)
আমার গ্রামের বাড়ি সংলগ্ন ফল ও ফুল বাগানে আজ ফুটেছে বেশ কয়েকটি “দই গোটা ফুল “। এই ফুলের বীজ এনেছিলাম খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ২০১৪ সালে। অবশ্য দশ/বারো বছর আগে দই গোটা ফুল আমি প্রথম দেখেছিলাম খুলনায় আমার একজন সহকর্মীর বাড়িতে, তবে তখন এর সঠিক নামটি জানতাম না। সহকর্মী বলেছিলেন এটা জাফরান ফুল। আমি ওনাকে বলেছিলাম এটা আসলে জাফরান নয়। কারণ জাফরান ফুল আমার পরিচিত, আমি জাফরান ফুল ১৯৮৯ সালে প্রথম দেখেছিলাম ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের অদূরে ভার্সেলী প্যালেসে।
বাংলায় : দইগোটা, ইংরেজিতে : Achiote বা lipstick tree আর এর বৈজ্ঞানিক নাম : Bixa orellana. এটা মূলত আমেরিকা অঞ্চলের ছোট গুল্ম জাতীয় গাছ। শুভ্র এই ফুলে পাপড়ির কিঞ্চিত গোলাপি আভা যেন স্নিগ্ধতার পরশ বুলিয়ে দেয় হৃদয়-মনে। ফুলের মাঝে ঘন পুংকেশরগুলো কুকড়িয়ে ফুলের সৌন্দর্য্যকে আরো বাড়িয়ে তোলে। এ গাছের ফলগুলোও বেশ সুন্দর। ফলগুলো লাল বর্নের এবং এর ত্বক স্পাইনযুক্ত। এর বীজ থেকে হলুদাভ-কমলা বর্ণের রঞ্জক (বিক্সিন) পাওয়া যায়।
অনেক দেশে এর রঞ্জক শরীর, বিশেষ করে ঠোট রং করার কাজে ব্যবহার করা হয়, তাই এর ডাকনাম হচ্ছে- লিপস্টিক গাছ। বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এর রঞ্জক মিস্টি দইয়ের রং করতে ব্যবহৃত হয়। এজন্যে আঞ্চলিকভাবে এই গাছকে দই-গোটা গাছ বলা হয়। কলম্বিয়ার মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে লোকজন এটাকে ঔষধি কাজে এবং সাধারণ সংক্রমণে ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে মাইক্রোবিয়াল দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণের চিকিৎসায় কলম্বিয়াতে এটা ব্যবহৃত হয়।
আমাদের দেশে এটি লিপস্টিক ট্রি বা দই গোটা নামে পরিচিত। বিশ্বজুড়ে এই গাছের সাধারণ নাম হ’ল আনাটো, ইউরুকাম, আছিয়োট ইত্যাদি। এটি ব্রাজিল, দক্ষিণ আমেরিকার স্থানীয় উদ্ভিদ এবং পরবর্তীকালে ১৭ শতকের দিকে স্পেনীয়দের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। উদ্ভিদের বোটানিক্যাল নাম বিক্সা ওরেলানা । এটি উদ্ভিদ পরিবার বিক্সেসেইয়ের সাথে সম্পর্কিত । লোকেরা এই গাছের বীজগুলি থেকে রঙ বের করে রান্নার কাজে, কাপড় রঙিন করতে এবং শরীর রাঙানো ইত্যাদিতে ব্যবহার করে।
এই গাছগুলি প্রধানত গুল্মজাতীয়। গাছের উচ্চতা সর্বোচ্চ ২০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। পাতাগুলি মাঝারি আকারের এবং এটি খুব আকর্ষণীয় নয়। ফুলগুলি হালকা গোলাপী সাদা বর্ণের হয়। এটি ফুলের মাঝখানে প্রচুর ফিলামেন্ট সহ পাঁচটি পাপড়ি পৃথক করেছে। ফুলগুলি আকর্ষণীয় হওয়ায় লোকেরা তাদের বাগানে এটি আলংকারিক গাছ হিসাবে ব্যবহার করছে। আমাদের দেশে বর্ষার শেষে এবং শরৎ ও হেমন্তকালে ফুল ফোটে।
ফলগুলি সুদৃশ্য এবং চারপাশে খুব নরম কাঁটা দিয়ে ফলগুলো ঢাকা থাকে। বীজগুলি খুব শক্ত এবং গভীর লাল রঙের হয়, লোকেরা রঙ বের করতে এই বীজগুলি ব্যবহার করে। দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসীরা দীর্ঘকাল ধরে তাদের শরীর রঙ করার জন্য এই রঙটি ব্যবহার করছে। ফিলিপাইন হ’ল সেই দেশ যা বর্তমানে প্রাকৃতিক রঞ্জন শিল্পে এবং প্রসাধনী সামগ্রী তৈরির জন্য এই বীজগুলির চাষ করছে।
মো. আলী আশরাফ খান, লেখক : মহাব্যবস্থাপক (অবসরপ্রাপ্ত) বিসিক।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা