আমি তখন কেবল সাংবাদিকতায় এসেছি, সংবাদে কাজ করি সম্পাদকীয় বিভাগে। কি নিয়ে সম্পাদকীয় লিখব সেটা ঠিক করে দিতেন সোহরাব ভাই। বজলুর রহমান সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে সেটা ছাপা হওয়ার আগে দেখেও দিতেন।
দেশের কোন সীমান্ত এলাকা দিয়ে নারী ও শিশু পাচার হচ্ছিল। তা নিয়ে একটি সম্পাদকীয় লেখার কথা বললেন সোহরাব ভাই। আমিও লিখে বসলাম এক জ্বালাময়ী সম্পাদকীয়। এই নারী ও শিশু পাচারের বিরুদ্ধে সে ছিল অসাধারণ এক লেখা। আমিতো নিজেই মুগ্ধ নিজের লেখায়।
বিকেলের দিকে বজলুর রহমান আমাকে ডাকলেন। তারপর বললেন, ‘তুমি কি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়েছো?’
আমি তখন দশ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নে জীবন-যাপন করে দেশে ফিরেছি। ফলে এ প্রশ্নের উত্তর ইতিবাচক হওয়ার কোনো কারণ ছিল না।
তিনি বললেন, ‘যদি দরিদ্র মানুষদের দেখা পাও কোথাও, তাহলেই শুধু বুঝবে দারিদ্র মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। খোঁজ নিয়ে দেখো এই নারী ও শিশুরা নিজের ইচ্ছায় পাচার হয়ে যাচ্ছে কিনা। পেটে ভাত না থাকলে মানুষ ভীষণ রকম জেদি হয়ে যায় এবং তখন মৃত্যুর ভয়ও তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়। তাই সম্পাদকীয় লেখার আগে এই কথাগুলো নিয়ে ভাববে। দরিদ্র মানুষের মুখে ভাত তুলে দিতে না পারলে পাচারের বিষয়টা বন্ধ হবে না। এবং পাচার যারা হচ্ছে তারা দু’মুঠো ভাতের জন্য নিজেকে এই পাচারকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে কিনা তা খোঁজ নিলেই জানতে পারবে।’
বলাবাহুল্য,সংবাদ সম্পাদক আমার সম্পাদকীয়টি ছাপেননি। নিউজপ্রিন্টের প্যাডের পাতা দুটো ফেলে দিয়েছিলেন ওয়েস্ট পেপার বক্সে। সেদিন আমি সত্যিই বোঝার চেষ্টা করেছিলাম বাস্তব এবং ক্লাসিক ভাবনার মধ্যে ফারাক কতটা।
হ্যাঁ আমার এই লেখার সঙ্গে গরু চুরি বা সীমান্ত অতিক্রম কিংবা বিএসএফের গুলিতে দরিদ্র মানুষের মৃত্যুর সম্পর্ক আছে।
# জাহিদ রেজা নূর, ডেপুটি ফিচার এডিটর, দৈনিক প্রথম আলো। তার ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা