অনলাইন ডেস্ক
শুরুর দিকে আমি বাজরিগার পাখি পালন করতাম। ১৯৯৮ সালের শেষে অথবা ১৯৯৯ সালের দিকে আমি প্রথম লাভবার্ড পাখি পালন করা শুরু করি।
লাভবার্ড দেখতে অনেক সুন্দর। লাভবার্ডের অনেক মিউটেশন আছে। লাভবার্ড এর কালার কম্বিনেশন আমাকে মুগ্ধ করে, ছোট পাখির ভিতর লাভবার্ডের আয়ুষ্কাল অনেক বেশি, এই পাখির অসুখ বিসুখ অন্যান্য পাখির থেকে অনেক কম হয়, খাঁচাতে তারা ১০ থেকে ১৫ বছর বাঁচে। তাদের যত্ন নেওয়া খুব সহজ । আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তাদের বন্ডিং পেয়ার একবার যদি কোন লাভবার্ড তাদের পেয়ার নিয়ে ফেলে তাহলে তাদেরকে আলাদা করা বা তাদের জোড়া টাকে ভাঙ্গা এতটা সহজ নয়। এটা একটা ভালোবাসার প্রতীক।
প্রথম লাভবার্ড হিসেবে আমি গ্রীন ফিশার লাভবার্ড পালন করি সেটা আমি ক্রয় করি কাটাবন এক পাখির দোকান থেকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক আমার প্রথম লাভবার্ড দুইটা ফিমেল পাখি দিয়ে শুরু হয় কারন আমি তখন লাভবার্ড এর মেল ফিমেল চিনতাম না তখন ওই পাখি আমার ঘরে ১০টা থেকে ১২ ডিম পাড়তো। পরে ওই পাখি চেঞ্জ করি এরপরে আরো একজোড়া পাখি নিয়ে আসি বাসায়। কিন্তু দোকানদার আমাকে ঠকায় পরেরবার দুইটা ছেলে পাখি ধরায় দিল আমাকে। এখনো ওই পাখি তো ডিম দেয় না আমার কাছে এভাবে কেটে যায় আট থেকে দশ মাস। এরপর ওই পাখিগুলো আমি দোকানদারের কাছে ৩০০০ টাকা দিয়ে বিক্রি করে আসি কিনেছিলাম ৬০০০ টাকা দিয়ে। এরপর ঠিক করলাম যে আমি আর পাখি পালন করবো না। কারণ বারবারই আমাকে ঠকতে হয়েছে এ পাখি বলতে গিয়ে। কিন্তু মন তো আর মানে না পরে কাঁটাবনের দোতালায় চলে গেলাম ৩০০০ টাকার সাথে আরো কিছু টাকা যোগ করে ৮০০০ টাকা দিয়ে একজোড়া লাইম ফিশার লাভবার্ড ক্রয় করলাম। এইবার দেখি দুইটা পাখি খালি ঝগড়া করে একটা আর একটা কে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলছে। এরপর যে পাখিটা বেশি আঘাত পাইসে ওটা বাসায় রেখে পরের পাখিটা আমি ওই দোকান থেকে বদলায় আরেকটা পাখি নিয়ে আসি। এরপর আমি নিজের থেকে চিন্তা করলাম এ টাকে একসাথে রাখবো না দুইটা দুই খাঁচায় পাশাপাশি রাখবো। রাখার ১৫ থেকে ২০ দিনের মাথায় দেখি একটা আরেকটার কাছে যাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছে এবং ছটফট করছে আমি চিন্তা করলাম এদেরকে এখন এক খাঁচায় রাখা যায় এরপর আমি একটা পাখি কে ধরে আরেকটা খাচায় রেখে দিলাম রাখার সাথে সাথে দেখলাম একটা একটা কে খাওয়ায় দেওয়া শুরু করলো এবং মাথা চুলকায় দেওয়া শুরু করলো তখন বুঝতে পারলাম হয়ত তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও পেয়ার নিবে। এরপর আমি একমাস যাওয়ার পরে খাঁচার ভিতর হারিয়ে দিয়ে দিলাম আর খাঁচার ভিতরে কিছু ঘাস দিয়ে দিলাম দেখি যে, ওই ঘাস নিয়ে তারা সুন্দর মত বাসা করছে। এরপর তারা সেখানে ডিম দিলো এবং ২০০৫ সালে আমি প্রথম লাইম ফিশার লাভবার্ড এর বাচ্চা করতে সক্ষম হই। এভাবেই আস্তে আস্তে আমার লাভবার্ড এ পথ চলা।
ছোটবেলা থেকেই আমার বাবা মা বোন এবং আমাকে খুব সাপোর্ট করে আসছে এবং বর্তমানে আমার আমার স্ত্রীও আমাকে খুব সাপোর্ট করে। আমার মাও আমার মত পশু-পাখি পালন করতে খুব পছন্দ করেন।
লাভবার্ড পালন করার জন্য খুব বেশি সময় দিতে হয় না। দৈনিক ২ থেকে ৩ ঘন্টা সময় দিলে এই লাভবার্ড থেকে ভালো একটা ফলাফল পাওয়া যায়।
সর্বোচ্চ আমার কাছে এখন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা দামের লাভবার্ডের জোড়া আছে। বর্তমানে আমার সংগ্রহে প্রায় ৪০ জোড়া উপরে লাভবার্ড আছে
বাংলাদেশের আবহাওয়া লাভবার্ড এর প্রজননের জন্য এবং লালন-পালন করার জন্য খুবই উপযোগী। আমরা যদি এই সেক্টর টা কে ধরে রাখতে পারি তাহলে এই সেক্টর থেকে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব এবং এই পাখির সেক্টরকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
লাভবার্ড এর সুবিধা হচ্ছে তারা খুব শক্ত প্রকৃতির পাখি যাদের অসুখ-বিসুখ অন্যান্য পাখির তুলনায় অনেক কম হয় বিশেষ করে ছোট পাখির ভিতরে। লাভবার্ড এর কালার কম্বিনেশন এবং মিউটেশন অনেক বেশি যেটা মানুষকে অনেক আকৃষ্ট করে। এদের যত্ন করা খুব সহজ যে কেউ চাইলে খুব সহজেই দুই থেকে তিন জোড়া লাভবার্ড পাখি পালন করতে পারবে। এদের আয়ুষ্কাল বেশি, এদের খাবার মোটামুটি বাংলাদেশের সব জায়গাতেই পাওয়া যায়, একবার লাভবার্ড সেট হয়ে গেলে তারা সহজেই ডিম বাচ্চা করতে সক্ষম হয়। এদের অসুবিধা গুলো মনে হচ্ছে এদের ছেলে মেয়ে চেনার বিষয়টা কারণ লাভবার্ড মেল ফিমেল দেখতে প্রায় একই রকম। খুব অভিজ্ঞ ব্রিডার ছাড়া অথবা ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাভবার্ড এর মেল ফিমেল নির্ণয় করা যায় না। এরা ডাকাডাকি অনেক করে অনেকের কাছে লাভবার্ড করে ডাকাডাকি ভালো লাগেনা। এদের জোড়া একবার ভেঙে গেলে দ্বিতীয়বার তাদেরকে জোড়া দেওয়া অনেক কষ্টকর হয়ে যায়। লাভবার্ড এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার পরে সেট হতে একটু সময় নেয়। লাভবার্ডের যদি জোড়া পছন্দ না হয় তাহলে একটা আরেকটার সাথে রক্তাক্ত মারামারি করে মেরে ফেলতে পারে
নতুনদের উদ্দেশ্যে বলবো সব সময় লোকাল ব্রিড এর লাভবার্ড এর বাচ্চা দিয়ে শুরু করার জন্য এবং সেই বাচ্চা ভালো কোন ব্রিডার থেকে কালেকশন করার জন্যে কখনোই ব্রীডিং পেয়ার দিয়ে শুরু করা উচিত নয় আর বাচ্চা নিলে বেশি করে নিতে হবে কারণ বাচ্চা অবস্থায় লাভবার্ডের মেল ফিমেল বুঝা যায় না। বেশি করে নেওয়ার উদ্দেশ্য হল এতে করে লাভবার্ডের জোড়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। বেবি অবস্থায় নিলে তারা নিজেদের মতো করে গড়ে তুলতে পারবে এবং সেগুলো দেখে নতুনরা অনেক কিছু শিখতে পারবে আর লাভবার্ড পালতে হলে অবশ্যই ধৈর্যের প্রয়োজন, ধৈর্য ছাড়া সফলতা পাওয়া খুব কঠিন।
লাভবার্ড দেখতে অনেক সুন্দর। লাভবার্ডের অনেক মিউটেশন আছে। লাভবার্ড এর কালার কম্বিনেশন আমাকে মুগ্ধ করে, ছোট পাখির ভিতর লাভবার্ডের আয়ুষ্কাল অনেক বেশি, এই পাখির অসুখ বিসুখ অন্যান্য পাখির থেকে অনেক কম হয়, খাঁচাতে তারা ১০ থেকে ১৫ বছর বাঁচে। তাদের যত্ন নেওয়া খুব সহজ । আর সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে তাদের বন্ডিং পেয়ার একবার যদি কোন লাভবার্ড তাদের পেয়ার নিয়ে ফেলে তাহলে তাদেরকে আলাদা করা বা তাদের জোড়া টাকে ভাঙ্গা এতটা সহজ নয়। এটা একটা ভালোবাসার প্রতীক।পাখির প্রতি আমার ছোটবেলা থেকেই অনেক দুর্বলতা ছিল। আমি ছোটবেলা থেকেই পাখি অনেক ভালবাসতাম। স্কুল ছুটি হওয়ার পরে বাসায় না ফিরে বিভিন্ন গাছের নিচে ঘুরে বেড়াতাম আর দেখতাম যে কোন পাখির বাচ্চা নিচে পড়ে গেছে কিনা বা কোন নতুন পাখি নতুন করে বাসা বেধেছে কিনা এভাবেই মূলত আমার পাখির প্রতি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসা তৈরি হয়।fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা