আবু মোহাম্মদ মাছানী
এই সুন্দর হাসির অধিকারিণী অভিনেত্রী, মডেল বর্তমানে আমেরিকার নিউইয়র্কে আছেন। বাবা মা ও সন্তানের সঙ্গে কিছুদিন থাকবেন ওখানে।
এই প্রতিনিধির সাথে তার কথা হয় অনলাইনে। করোনাকালে তার প্রবাস জীবন কেমন কাটছে, আমেরিকায় বসবাসরত প্রবাসী শিল্পীরা কেমন আছে, তার ক্যারিয়ার, অভিনয় জীবন, অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হলো। নিচে তা হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্র: কেমন আছেন? স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য কি চলে গেছেন?
উঃ: নট রিয়েলি, এখনো পুরোপুরি প্রবাসী হতে পারি নাই।স্টিল ইন প্রসেস। আসলে আমার শ্বশুর, শাশুড়ি থাকে ঢাকায়, আর আমার ফ্যামিলি থাকে নিউইয়র্কে। সো, আমরা এক বছরে টাইম ভাগ করে দুই ফ্যামিলির সাথে থাকছি। এবং নিজেদের প্রস্তুত করছি। দেখি ফাইনালী সেটেল্ড হওয়া যায় কিনা। তবে বছরে ৫-৬ মাস থাকা হচ্ছে আমেরিকাতে।
প্র: করোনাকালে প্রবাসী শিল্পী সমাজ কেমন আছে, তাদের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে কি নিয়মিত? বিস্তারিত জানান।
উঃ:কভিড-১৯ এর কারণে শিল্পীরা আসলে সাফার করছে। দুই দেশের আর্টিস্টরা কাজ বন্ধ করে বাড়িতে বসে আছে। তবে আমেরিকাতে বেকারদের অনেক সুবিধা, কিন্তু কষ্টটা তো বাংলাদেশের শিল্পীদের নিয়ে। এখানে সবার সাথে আমার যোগাযোগ হচ্ছে প্রতিদিন। তাই তো কিছুদিন আগে মোটিভেশনাল একটা কনটেন্ট বানালাম বিদেশে থাকা শিল্পীদের নিয়ে।
প্র: খবরে জানতে পারলাম প্রবাসে থেকে বাংলাদেশী শিল্পীদের জন্য একটা ফান্ড করেছেন। এটা একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এর বিস্তারিত বলবেন কি?।
উঃ:হ্যাঁ, ফান্ড রেইজিং শুরু হয়েছে অভিনেতা টনি ডায়েস এর উদ্যোগে মূলত ক্যামেরার পিছনে যারা সব সময় কাজ করে সে সব ক্রুদের জন্য। সকলে এ ব্যাপারে দারুণ সহযোগিতা করেছে এবং একটা বড় ধরনের ফান্ড দেশে পাঠানো হয়েছে।
প্র: আমেরিকাতেও অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী করোনাতে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন। শিল্পী সমাজের মধ্যে কেউ আছে কি?
উঃ: না, আমার জানা মতে আমেরিকাতে কোন শিল্পী এখনো আক্রান্ত হয়নি।
প্র: আপনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন, মেইন ফোকাস কি বা কনটেন্ট কি? কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
উঃ:ইউটিউব চ্যানেল টা আমার হাজব্যান্ড আদনান ফারুক হিল্লোলের জন্য খোলা। সে খুলে দিয়েছে এবং সারাক্ষণ ওই উৎসাহ দেয়। গত এপ্রিল থেকে এটা চালু করেছি। এর মধ্যে সিলভার প্লে বাটন অলরেডি এসে গেছে। আমার সাবস্ক্রাইব সংখ্যা ১৪৪ হাজার। আসলে আমি নিজেও ভাবিনি যে এত জলদি এত সাড়া পাবো। সকলকে ধন্যবাদ এজন্য। কনটেন্ট হচ্ছে কখনো ট্রাভেল, কখনো লাইফস্টাইল, রান্না, তারকাদের ইন্টারভিউ, দর্শকদের কানেক্ট করা আমার সাথে। মোটকথা ‘নওশীনের সাথে যা যা কিছু’।
প্র: কাজ কমিয়ে দিয়েছেন, সেটা কি বিদেশে স্থায়ী হওয়ার জন্য না সাম্প্রতিক ওমরা হজ করেছেন এ কারণে?
উঃ: কাজ কমানো আসলে হয়ে গেছে। মানে, আমি এখন আমার ব্যক্তিগত জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। তাছাড়া ভালো স্ক্রিপ্ট না পেলে কাজ করতে চাচ্ছিলাম না। আর ওমরা হজ অবশ্য একটা ব্যাপার কাজের ব্যাপারে সিলেক্টিভ হওয়া। তাছাড়া ইউটিউব চালানো, বিদেশ ভ্রমণ সবমিলিয়ে রেগুলার কাজ একটু কমেছে। আমি ইচ্ছা করে সেটা করেছি। মিডিয়াকে বাই বলি নাই, কিন্তু অন্যভাবে মিডিয়াতে আছি। একটা সময় যেমন মানুষের প্রমোশন হয় চাকরিতে তেমনি আমিও চেয়েছি বেটার কিছু করতে আস্তে আস্তে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে।
৭: প্র: ছিলেন রেডিও জকি, এরপর টিভি উপস্থাপিকা, তারপর অভিনয়শিল্পী আর এখন ইউটিউবার। এত ট্রানসফর্মেশন কেন? পেশাগত ইনসিকিউরিটি?
উঃ: না, পেশাগত ইনসিকিউরিটি কখনো আমার ছিলনা। আমি মনে করি যে আমি ভাগ্যবতী । ভবিষ্যতে যেন ভালো থাকি এই দোয়াই করবেন। আমি যখন যে মাধ্যমে কাজ করেছি এনজয় করেছি। রেডিও জকি যখন ছিলাম তখন “আই ইউজড টু লাভ দ্যাট প্রফেশন আই স্টিল লাভ দ্যাট”। ওখান থেকে যখন উপস্থাপিকার সুযোগ পেয়েছি সেটাও কাজে লাগিয়েছি। তারপর যখন অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছি সে সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি। আর ইউটিউব এর কথা যদি বলি তাহলে আপনি দেখবেন যে, এখন হলিউড-বলিউডে বিশ্বের প্রত্যেকটা আর্টিস্টদের একটা নিজস্ব চ্যানেল আছে। আর চ্যানেল মানে নিজস্ব কনটেন্ট আরে কনটেন্ট এর মালিক আপনি নিজেই। আর টেলিভিশন এখন নাই বললেই চলে। কোভিড-১৯ আমাদের আরো বুঝিয়ে দিয়েছে টেলিভিশনের ভবিষ্যৎ। এখন ডিজিটালী সবকিছু চিন্তা ভাবনা করতে হয়। আর ওই চিন্তা থেকে আমার হাজব্যান্ড আমাকে ইন্সপায়ার করেছে। “আই ইনজয়েড ইট ভেরি মাচ”। এ কাজ করতে ভালো লাগছে। আবারও বলি ইনসিকিউরিটির কোন কারণ নেই- অবস্থাও আসেনি।
প্র: আপনার কোন ছবি আলোর মুখ দেখল না এ ব্যাপারে কি কিছু বলবেন?
উঃ: এটা ভুল কথা। আমার প্রথম ছবি ‘সোয়াচান পাখি’ আলোর মুখ দেখেনি। শ্যুটিং চলছিল ধীরগতিতে। তারপর পরিচালক না ফেরার দেশে চলে গেলেন। ছবি মুক্তি পেয়েছে ‘মুখোশ মানুষ’, ‘দুদুমিয়া’ ও ‘প্রার্থনা’। দ্বিতীয় ছবি হল ‘হ্যালো অমিত’ সেটা মুক্তি পায়নি। কোনোটাতেই আমার কাজের কোনো ঘাটতি ছিল না। আমি মনে করি ফিল্মের জন্য আমি পারফেক্ট নই।
প্র: আর যদি বিদেশে স্থায়ী না হন তাহলে কবে ফিরছেন ?
উঃ: আমাদের ইনফ্যাক্ট সামনে মাসে দেশে ফেরার কথা ছিল। হয়তো সামনে মাসে ফিরতে পারব না একটু সময় লাগবে। স্থায়ি তো একসময় হতেই হবে। যেহেতু বাবা-মা এখানে থাকে, আমার সন্তানও বড় হচ্ছে সবকিছু মিলিয়ে এখানে আমার স্থায়ী হতে হবে।
প্র:এখনকার টেলিভিশন নাটকের ব্যাপারে কি বলবেন? অনেকের অভিযোগ নাটকে কোন কনটেন্ট থাকেনা?
উঃ: এখনকার টেলিভিশন নাটক সম্পর্কে অনেকের অনেক মন্তব্য আছে। আমি বোদ্ধা নই, কমেন্ট করবো না। আমরা যখন কাজ করেছি তখন এত সোশ্যাল মিডিয়ার ভিড় ছিল না। তো সেই ভিড়ের মধ্যে আমাদের পড়তে হয়নি। আর আমরা যখন কাজ করেছি, আমরা দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছি, পরিচিতি পেয়েছি। আমি একটি টেলিভিশন প্রোগ্রাম করেছি ১২ বছর পরেও এখন মানুষ সেটা মনে করে। সে জিনিসটা আমি মিস করি খুব। সে ক্ষেত্রে বলতে পারি হয়তো তখন কন্টেন্ট ছিল বলে এখনো মানুষ মনে রেখেছে।। আর এখনকার কনটেন্ট কেন মানুষ পছন্দ করে না সেটা আমার বোধগম্য নয়। তবে কিছু কিছু কন্টেন্টতো এখনকার জেনারেশন পছন্দ করছে। তা না হলে এত এত কনটেন্ট হবে কেন?
প্র: আপনার দর্শক-ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলেন?
উঃ: দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলব যারা আমাকে ভালবাসেন, তারা ভালবাসা বন্ধ করে দেবেন না। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। স্বপ্ন দেখি ভালো কাজ করার। আপনাদের সাথে সবসময় আছি। ইন্ডাস্ট্রির সাথে আছি। হয়তো বেছে বেছে কাজ করছি বা করব। ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা