অনলাইন ডেস্ক
বর্তমান বাজারে ডলারের বেশ কয়েকটি রেট প্রচলন আছে। এর মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এক্সপোর্ট প্রসিডে ১০৬ এবং রেমিট্যান্সে ১০৮ টাকা দিচ্ছে ব্যাংক। এ ছাড়া আন্তঃব্যাংক বিনিময়ে ডলারের রেট ১০৭ টাকা। আর আমদানিতে গড়ে ১০৭ টাকা রেট ধরেছে ব্যাংকগুলো। তবে আমদানিকারকদের দাবি, ব্যাংকগুলো তাদের কাছে ১১৩-১১৪ টাকা রেট নিচ্ছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যাংকগুলোকে যে ডলার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তার রেট সম্প্রতি দেড় টাকা বাড়িয়ে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত এপ্রিলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির রেট ১ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এ ছাড়া ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে গত মার্চ পর্যন্ত প্রতি মাসে ডলারের দাম ১ টাকা করে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত এক বছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ২১ শতাংশ। এ সময় ডলারের দর ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বেড়ে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মূলত দুটি কারণে দ্রুত হারে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। এর একটি হলো রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির চাপ কমানো, আরেকটি কারণ আইএমএফের শর্তানুযায়ী, বিনিময় হারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি একক দর প্রতিষ্ঠা করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্সে ডলারের দর এক সময় ছিল যথাক্রমে ৯৯ ও ১০৭ টাকা। অর্থাৎ ব্যবধান ছিল ৮ টাকা, যা বর্তমানে ২ টাকায় নেমেছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটও সেই অনুযায়ী বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের রেট ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে এর সঙ্গে এক্সপোর্ট রেটের ব্যবধান মাত্র দেড় টাকা। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আগামী কয়েক মাসে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রির হার আরও কিছুটা বাড়তে পারে। আর জুলাইয়ের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের রেটের সঙ্গে বাফেদার কোনো ব্যবধান থাকবে না। সব এক হয়ে যাবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য মূল্যবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির প্রভাব এবং লাগামহীন আমদানি ব্যয় মেটানোর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের শেষ দিকে চড়তে থাকে ডলারের মূল্যের পারদ। তখন ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দরের ব্যবধান ১০ টাকায় উঠে যায়। শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার সঙ্গে ডলারের দর ধরে রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের পরামর্শে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেয় গত বছরের জুনে। আর ওই বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু করে বাফেদা ও এবিবি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর কালবেলাকে বলেন, শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংক জোর করে ডলারের দর আটকে রেখেছে। এটা ঠিক হয়নি। যখন আর কিছুই করার নেই, তখনই বাজারের ওপর ডলারের দর ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা আরও আগে করা হলে সংকট এত তীব্র হতো না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক ঊধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, তখন আমরাও ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম। গভর্নরও সে রকমই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সেটা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
এদিকে ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দরের ব্যবধান ১০ টাকা থেকে কমাতে গত বছরের আগস্ট থেকে নেওয়া একাধিক উদ্যোগের সুফল মিলেছে ৯ মাস পর। ডলারের দরের ব্যবধান কমে বর্তমানে আড়াই টাকায় নেমেছে।
খোলাবাজারে চলতি সপ্তাহে ডলারের দাম নেমেছে ১১০-১১১ টাকায়, যা ২০২২ সালের আগস্টে ছিল সর্বোচ্চ ১২১ টাকা। এতে ব্যাংক ও খোলাবাজারে ডলারের দরে পার্থক্য আড়াই টাকায় নেমেছে। ব্যাংকে নগদ অর্থে ডলার পাওয়া যাচ্ছে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০৯ টাকায়। এক পর্যায়ে ব্যাংকেই বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ১১১ টাকায়।
বিদেশ ভ্রমণ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ডলারের দরে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অভিযানও দর কমিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অনেকে।
রাজধানীর পল্টনের মেক্সিমকো মানি এক্সচেঞ্জের এমডি মোশারফ হোসেইন বলেন, চাহিদা কমায় খোলাবাজারে ডলারের দাম এখন স্থিতিশীল। বেশ কিছুদিন থেকেই ডলারের দাম ১১০ টাকা। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করেছি, কিনছি ১০৯ ও ১০৯ টাকা ৫০ পয়সায়। রোববার বিক্রি করলাম ১১০ টাকায়। চাহিদা অনুযায়ী ডলার মিলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের গতিবিধি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক বছরে অব্যাহতভাবে বেড়েছে ডলারের দর। ২০২২ সালের ১০ মে ব্যাংকে আমদানি পর্যায়ে ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। গত এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ১০৭ টাকা ৮৩ পয়সা। এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২১ টাকা ১৩ পয়সা বা ২৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর রোববার ১০৮ টাকায় আন্তঃব্যাংকিং লেনদেনে ডলার বেচাকেনা করেছে। ডলারের এ দরের সঙ্গে ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে ১০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা পর্যন্ত কমিশন যোগ করে।
অন্যদিকে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সায়। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। ২০২১-২২ অর্থবছর ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, করোনার প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকা অর্থনীতিতে আমদানি চাহিদা বৃদ্ধিতে ডলারের ব্যয় বেড়ে যেতে শুরু করে। এর বিপরীতে তেমন আমদানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় ডলারের সংকটে পড়ে দেশ। এতে টাকার বিপরীতে শক্তিশালী হতে শুরু করে ডলার। ফলে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের মুদ্রাও ডলারের বিপরীতে দর হারাতে থাকে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ দৃশ্যমান কারণের সঙ্গে ডলারের দর বৃদ্ধিতে কারসাজিও ভূমিকা রাখে বলে অভিযোগ করে বিভিন্ন সংস্থা।
ব্যাংকে ডলারের দর নির্ধারণের পাশাপাশি বাফেদার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকের নগদ অর্থে ডলার বিক্রির দরের চেয়ে খোলাবাজারে ব্যবধান হবে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা। তখন থেকে বাফেদার দেওয়া ডলার দর দেখে খোলাবাজারে দর নির্ধারণ করে আসছে মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
fblsk
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা