ছবিতে শাকিল(১২), সাদিয়া (৬) এবং সাইফ (১১) করোনা ভাইরাসের কারণে তাদের এখন স্কুল ছুটি। ছবি : তাসকিনা ইয়াসমিন।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে বিপদে রয়েছে বিশ্বের শিশুরা। ইউনিসেফ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার রোধে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ শিশু দুর্ব্যবহার, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, শোষণ, সামাজিক বাধার মুখোমুখি হওয়া এবং যত্নকারীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এই রোগের কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক বিপর্যয়ের মাঝেই শিশুদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য ইউনিসেফ সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাগুলোকে সহায়তা দিতে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থাটি ‘মানবিক কার্যক্রমে শিশু সুরক্ষার জন্য জোট’-এ সহযোগীদের সঙ্গে মিলে কিছু নির্দেশনা প্রকাশ করেছে।
রবিবার (২২ মার্চ) ইউনিসেফ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানা গেছে।
ইউনিসেফ বলেছে, কয়েক মাসের মধ্যে, কোভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে শিশু ও পরিবারগুলোর জীবন ওলটপালট করে দিয়েছে। স্কুল বন্ধ হওয়া ও চলাচলের সীমাবদ্ধতার মতো কোয়ারান্টাইন প্রচেষ্টাগুলো শিশুদের দৈনন্দিন জীবন ও তাদের সহায়তা ব্যবস্থাকে ব্যাহত করছে, যদিও এগুলো প্রয়োজনীয় বলেই বিবেচিত হচ্ছে। এগুলো যত্নকারীদের ওপর নতুন মানসিক চাপ তৈরি করছে, যার কারণে তারা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে পারে। কভিড-১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কিত নেতিবাচক ধারণা কিছু শিশুকে সহিংসতা এবং মনো-সামাজিক সংকটের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপসমূহ, যা কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের মানুষকে বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কেন্দ্র করে গৃহীত নয় তাই তা তাদের যৌন নিপীড়ন ও নিগ্রহের শিকার হওয়ার এবং শিশুবিয়ের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অসমর্থিত সূত্রে চীন থেকে সম্প্রতি পাওয়া তথ্য-প্রমাণ নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে ঘরোয়া সহিংসতার ঘটনা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধির হারের প্রতি ইঙ্গিত করে।
ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক প্রধান কর্নেলিয়াস উইলিয়ামস বলেন, বিভিন্ন উপায়ে এই রোগটি এখন সরাসরি যারা সংক্রমিত হয়েছে তাদের চেয়েও অনেক বেশি সংখ্যক শিশু ও পরিবারের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়েরা তাদের শিশুদের যত্ন নিতে এবং প্রয়োজন মেটাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। শিশুদের সুরক্ষাজনিত ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে। এই নির্দেশনা সরকার এবং সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের একটি রূপরেখা প্রদান করে, যে পদক্ষপগুলো এই অনিশ্চিত সময়ে শিশুদের সুরক্ষিত রাখার জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে।”
পূর্ববর্তী জনস্বাস্থ্যগত জরুরি পরিস্থিতিগুলোতে ক্রমবর্ধমান হারে শিশুদের নির্যাতন ও শোষণের ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিম আফ্রিকাতে ইবোলা ভাইরাসজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় স্কুল বন্ধ হওয়ার বিষয়টি শিশুশ্রম, অবহেলা, যৌন নিপীড়ন ও কিশোরীদের গর্ভধারণ বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। সিয়েরা লিওনে, কিশোরীদের গর্ভধারণের ঘটনা প্রাদুর্ভাবের আগের সময়ের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ১৪ হাজারে পৌঁছায়।
নির্দেশনার অংশ হিসেবে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণে সরকার ও সুরক্ষা প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের প্রতি জোটের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে, যা কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সব ধরনের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপের জন্য অপরিহার্য। এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে: যৌন নিপীড়ন ও নিগ্রহ প্রতিরোধ এবং নিরাপদে উদ্বেগের কথা জানানোর বিষয়গুলোসহ, কোভিড-১৯ এর সঙ্গে সম্পর্কিত শিশু সুরক্ষা ঝুঁকি বিষয়ক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শিশুসেবা প্রদানে নিয়োজিত কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনা প্রকাশ পেলে কীভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে সে বিষয়ে যারা প্রথমেই পদক্ষেপ নেবে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ( জিবিভি পকেট গাইড ) এবং জিবিভির শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের সহায়তা প্রদানে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে সহযোগিতা করা, শিশুদের জন্য প্রাপ্য রেফারেল ও অন্যান্য সহায়তামূলক সেবা বিষয়ক তথ্য শেয়ার বৃদ্ধি করা, তথ্যসমৃদ্ধ কর্মসূচি গ্রহণ ও প্রচারণার জন্য কভিড-১৯ কীভাবে শিশু, বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের জীবনকে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রভাবিত করে তা মূল্যায়নের জন্য তাদেরকেই সম্পৃক্ত করা, শিশুদের মানসিক সহায়তা প্রদানে এবং যথাযথভাবে আত্ম-যত্নে সম্পৃক্ত করতে শিশু প্রধান পরিবার ও পালনকারী পরিবারসহ অন্তর্বর্তীকালীন সেবাকেন্দ্র ও পরিবারগুলোকে লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা প্রদান করা, যেসব পরিবারের উপার্জনের পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের আর্থিক ও উপকরণগত সহায়তা প্রদান করা, শিশুকে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা ঠেকাতে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়া এবং বাবা কিংবা মায়ের, অথবা যত্নকারীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা মৃত্যুর কারণে পর্যাপ্ত যত্ন থেকে বঞ্চিত শিশুদের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে সব শিশুকে সুরক্ষা প্রদানের বিষয়টিকেই যাতে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় তা নিশ্চিত করা।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারিকালীন শিশুদের সুরক্ষা বিষয়ক কারিগরি মন্তব্য করা যাবে ইউনিসেফ এর এই লিংক এ। : https://www.unicef.org/documents/technical-note-protection-children-coronavirus-disease-2019-covid-19-pandemic
করোনা পরিসংখ্যান এর লাইভ আপডেট দেখুন
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা