কৃষ্ণা রানী চৌধুরী। বিআইডব্লিইটিএ-এর সহকারী হিসাব ব্যবস্থাপক। অফিস থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হয়ে ব্যাংকে যাচ্ছিলেন, টাকা তুলতে। হাঁটছিলেন ফুটপাত দিয়ে। যে পথটুকু পথচারীদের জন্য নির্ধারিত সে পথেই। ট্রাস্ট পরিবহনের একটি বাস হঠাৎ ওঠে যায় ফুটপাতে। বেপরোয়া গতির ধাক্কা। বাসের চাকায় থেতলে যায় কৃষ্ণা রানীর বাঁ পা।
অথচ কিছুক্ষণ আগেও যে মানুষটি অফিস কলিগদের সঙ্গে হেঁটে কথা বলেছেন, আজ তিনি পঙ্গু। জীবন ঝুঁকি নিয়ে হাসপাতালে লড়ছেন। কাতরাচ্ছেন। এর আগে গত এপ্রিলেও এই বাংলামটরের কাছাকাছি দুই বাসের রেশারেশিতে রাজীব নামে একজনের হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। পরে জীবনযুদ্ধে হার মেনেছে রাজীব।
কিন্তু এত কিছুর পরও বোধশূণ্য এই গাড়ি চালকরা, পরিবহন মালিকরা আর এই সেক্টরে যুক্ত সিন্ডিকেট। বছরকে বছর আমরা যাদি পরিসংখ্যান দেখি, দুনিয়ার বড় বড় যুদ্ধেও এত মানুষ নিহত হয়না। অথচ বাংলাদেশে প্রতিবছর ব্যাপক হারে মানুষ প্রাণ দেয় বেপরোয়া গাড়ি চালাবার জন্য। প্রশ্ন আসে, এ দায় কার? নিরাপদ সড়ক কি নামেই? স্বাভাবিক মানুষ কৃষ্ণা রানী কি তাহলে ফুটপাত দিয়েও পথ চলতে পারবেন না? রাষ্ট্রের বিবেক কি অন্ধ হয়ে গেছে?
আপনাদের মনে আছে কি, ২০১৮-এর আগস্ট বিপ্লবের কথা। ফুটপাতে দাঁড়ানো অবস্থায় দুই শিক্ষার্থীকে বাসা চাপা দিয়ে মেরে ফেলে। রমিজউদ্দিন স্কুলের দিয়া আর রাজিবের জীবন কেড়ে নেয়ার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠেছিল। সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ে সরকার তখন টলায়মান। অনেক দাবি আর অনেক আইনের কঠোর প্রয়োগের বুলি আওড়েছেন কর্তারা। ঐ পর্যন্তই। সে সময় ভুলিয়ে ভালিয়ে সেই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। তারপর দৃশ্যত মনে হয়েছে, সংশ্লিষ্টরা হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। এরপর ফের যেই লাউ সেই কদু। সড়কে মৃত্যুর মিছিলতো থামেনি, পরিসংখ্যান বলছে অনেক বেড়েছে।
দুর্ঘটনা আমাদের এখানে নতুন কিছু নয়। এবারও ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া আর ফেরায় শতাধিক মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। আর সকালে খবরের কাগজ খুললে, অনলাইন দেখলে বা টেলিভিশন স্ক্রলে চোখ রাখলেই বুঝা যায় কত প্রাণ ঝরেছে। ট্রাফিক আইন আর সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে এন্তার কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে। প্রধানমন্ত্রী একগুচ্ছ নির্দেশনা দিয়েছেন কিশোরবিপ্লবের পরপরই। ফের নির্দেশনা দিয়েছেন মঙ্গলবার সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে। খোদ প্রধানমন্ত্রী যেখানে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন, কিন্তু বাস্তবায়ন কই? তাহলে প্রশ্ন জাগে, প্রধানমন্ত্রীর কথাও কি সংশ্লিষ্টরা আমলে নিচ্ছেন না।
সংসদে আইন পাশ হয়েছে। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, নামেই আইন পাশ হয়েছে। মিডিয়ার খবর, দশমাস পার হলেও এখনও নাকি কোনও বিধিই প্রণয়ণ হয়নি। স্বভাবতই বলতে হয়, এর জন্য কি স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আবারও পথে নামতে হবে? সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান তো এই সেদিন, একশোর বেশি সুপারিশনামা তুলে দিয়েছেন দুর্ঘটনা দূর করতে। অথচ দেশের সাধারণ মানুষও জানেন, বাসের বেপরোয়া শ্রমিকরা কোন নেতাদের আসকারায় সড়কের অবস্থা বেহাল করে রেখেছেন। তাছাড়া যেই বিআরটিএ গাড়ি আর গাড়ি চালকের কাগজপত্রের সঠিকতা নিশ্চিতের দায়িত্বে আছেন সেই প্রতিষ্টানের ঘুষ দুর্নীতির ফিরিস্তি ওপেন সিক্রেট। সুতরাং যা হবার তাই। যদি সঠিক মানুষকে লাইসেন্স না দিয়ে অদক্ষ লোকের হাতে লাইসেন্স তুলে দেয়া তাহলে যা হবার তাই হচ্ছে।
কথা হচ্ছে, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো একটি বড় প্রতিষ্ঠান আছে, কর্তারা আছেন, যারা নীতি নির্ধারণ করেন, কর্মপরিধি ঠিক করেন তারা কি করছেন? বিআরটিএ কি রাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী? স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন কি করছে? বিআরটিএ-এর ঘুষ দুর্নীতির রাঘব বোয়ালরা কিভাবে তাদের অপকর্ম করে যাচ্ছেন? যারা সড়কে শৃঙ্খলার দেখভাল করছেন তারা কি করছেন?
NB:This post is copied from mzamin.com
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা