দেশে দিন দিন অসংক্রামক রোগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, সিরোসিসসহ নানাবিধ অসংক্রামক রোগ এখন প্রায় বেশির ভাগ বাড়িতেই দেখা যাচ্ছে। এর প্রধানতম কারণ হচ্ছে আমাদের জীবন মানে অসতর্কতা।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বহুখাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা ২০১৮-২০২৫ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ সেমিনারের আয়োজন করেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষ এখন তাঁদের নিজেদের শরীরের যত্ন নেয় না। চর্বি, তেল, চিনিযুক্ত খাবার বেশি খায়। শারীরিক ব্যায়াম করে না, সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করে না। এর ফলে নিজেদের অজান্তেই নিজেদের শরীরে অসংক্রামক রোগের বাসা বানিয়ে ফেলছে। এই রোগগুলির কারণে রোগাক্রান্ত মানুষটির যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি তাঁর পরিবার তথা দেশেরও সমান ক্ষতি হচ্ছে। একারণে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের বহুমাত্রিক পরিকল্পনার পাশাপাশি জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নাই।
অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মতে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির কারণসমূহ হলো তামাক সেবন, ধুমপান, অস্বাস্থ্যকর তৈলাক্ত খাবার, অতিরিক্ত লবন, শারীরিক অলসতা, মদ্যপান ইত্যাদি। এসব যদি কারো জীবনাচরণে বিদ্যমান থাকে তাহলে তাঁদের মধ্যে এই রোগগুলো হবার প্রবণতা বেড়ে যায়।
যেহেতু এই দীর্ঘমেয়াদী রোগগুলো একবার হয়ে গেলে তা সারাজীবন থাকে, তাই রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে আমাদের রোগ প্রতিরোধের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। আর এসব ঝুঁকির কারণগুলো নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরকারের অন্যান্য খাতের উপর নির্ভরশীল। প্রণয়নকৃত ‘বহুখাতভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রমের মূল বুনিয়াদী নকশা হিসেবে বিবেচিত হবে।
‘সকল নীতিতে স্বাস্থ্য’ এই মূলমন্ত্র ধারণ করে যদি সকল বিভাগ, সংস্থা ও দপ্তর তাঁদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেন, সমাজের সকল অংশ, গণমাধ্যমকর্মীগণ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব সকলে যদি একযোগে কাজ করে তবেই অসংক্রামক রোগের আসন্ন মহামারী মোকাবেলায় সফলতা লাভ করা সম্ভব হবে।
সভায় আলোচকগণ জানান, বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো বাংলাদেশেও হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বিভিন্ন ধরণের মানসিক রোগ ইত্যাদির মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটে যার ২২ শতাংশই হলো অকাল মৃত্যু।
এছাড়াও অকাল মৃত্যুর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কারণ হলো আত্মহত্যা, মাদকাসক্তি, সড়ক দুর্ঘটনা, পানিতে ডোবার ইত্যাদি। দীর্ঘমেয়াদী এই সকল অসংক্রামক রোগ ও তার ব্যয়বহুল চিকিৎসার ফলে প্রতিবছর লক্ষাধিক লোক দারিদ্র সীমার নিচে চলে যায়।
ফলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর সেজন্যই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অসংক্রামক রোগকে বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।
ফেসবুক পেজ :
আরও পড়ুন : শ্রদ্ধা, ভালবাসা, চােখের জলে রবিউল হুসাইনকে বিদায়
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা