দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচির (এসএসএনপি) পরিধি বছর বছর বৃদ্ধি পেলেও দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য আলাদা বা বিশেষায়িত কোনো কর্মসূচি না থাকায় তারা এসব কর্মসূচির সুবিধা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারছে না।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) ‘খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ’ ও ওয়ার্ল্ড ভিশন-এর সম্মিলিত উদ্যোগে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অবস্থান: নতুন নীতি কাঠামোর প্রস্তাবনা’ শীর্ষক বার্ষিক সম্মেলনে বক্তারা এসব বলেন। রাজধানীর সিরডাপ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, এসএসএনপিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি স্থায়িত্বশীল করতে চাইলে এর প্রকল্পগুলোকে কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করতে হবে। সকল কর্মসূচির কেন্দ্রে রাখতে হবে মানুষকে, তাদের চাহিদাকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাজী মোহাম্মাদ নুরুল কবির বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির জন্য এ অর্থবছরে বরাদ্দ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাতার পাশাপাশি গ্রাজুয়েশন স্কিম চালু হয়েছে। সকল প্রতিবন্ধী মানুষকেই এর আওতায় আনা হয়েছে। এসএসএনপির পাঁচ বছরের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। সহায়তা প্রদান কার্যক্রম ক্রমশ ডিজিটালাইজ হচ্ছে, ফলে দুর্নীতির আশংকা হ্রাস পাচ্ছে। অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা কার্যকর আছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সকল মানুষের অন্তর্ভুক্তি আমাদের সার্বিক উদ্দেশ্য। খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আসলে সরকার বিবেচনা করবে।
ড. এম এম আকাশ বলেন, গবেষণাটি নমুনা ভিত্তিক, তাই এটা দিয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির সাধারণীকরণ করা সম্ভব নয়। এনজিওদের কাজের ফলে এ দুটি এলাকায় এসএসএনপিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি ইতিবাচক হলেও সারা দেশের আর যা তথ্য পাওয়া যায় তা সন্তোষজনক নয়। আদিবাসীদের মধ্যে দারিদ্র্যের হার যেহেতু ৬০ শতাংশ, যা জাতীয় হারের চেয়ে অনেক বেশি, ফলে তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি ও উন্নয়ন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এসএসএনপির মোট বাজেটে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, উপকারভোগীর জন্য যাচ্ছে ২৪ শতাংশ অর্থ, যেটাকে যৌক্তিকভাবে বিন্যস্ত করা জরুরি।
মোহাম্মাদ খালেদ হাসান বলেন, জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের ভিত্তিই হচ্ছে ‘অন্তর্ভুক্তিকরণ’। কিন্তু কতজন মানুষ পিছিয়ে রয়েছেন সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কাছে নেই। সরকার একক নিবন্ধনের যে প্রক্রিয়া বা ডাটাবেইজ শুরু করেছে তা সম্পূর্ণ হলে আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারব। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য আলাদাভাবে ভাবার সুযোগ রয়েছে, যা উল্লিখিত কৌশলেও বলা হয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে অগ্রগতি নেই। ভাতা ভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আমরা সামাজিক বীমায় পরিণত করতে চাচ্ছি, সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া দরকার। ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ এতে কীভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে তার কৌশল নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
রায়না আহমেদ তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ওএমএস চালু রয়েছে। চা বাগানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কাজ রয়েছে।
ড. আসিফ শাহান তার উপস্থাপনায় উল্লেখ করেন, খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তি এই সহায়তাগুলো ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি করে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পেরেছে। ইতিমধ্যে উপকারভোগী নির্বাচন এবং সুবিধা বিতরণ নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়গুলি নতুন ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছে। অন্যদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে এনজিওগুলি সরকারি এজেন্সিগুলিকে সহায়তা এবং প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, এটি একটি ধাঁধার মত যে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগণের অংশগ্রহণ বেড়েছে কিন্ত তা তাদের জীবনযাত্রায় যথেষ্ট পরিবর্তন আনতে পারেনি।
তিনি বলেন, ভিজিডি’র ক্ষেত্রে স্কোর-কার্ড পদ্ধতি চালু হলেও এতে দুর্নীতি রোধ করার জন্য এনজিওদেরকে সাথে নিয়ে কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এনজিওদের সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালিয়ে চাওয়া প্রয়োজন, এর ফলেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ তাদের অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে জানতে পারছেন। এছাড়াও, অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা সক্রিয় করা প্রয়োজন। কাজের বিনিময়ে খাদ্য, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ও দুগ্ধদানকারী মায়েদের ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুবিধাভোগীদের প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী নগদ সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রদান, সঞ্চয়কে উৎসাহিতকরণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর জীবিকার কথা বিবেচনা করে প্রশিক্ষণ প্রদান, সহায়তা প্রদানের জন্য পুনরায় নকশা বা ডিজাইন করা এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সভায় বক্তারা বলেন, এনজিওদের ভূমিকার কারণে চলমান ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা কোথাও কোথাও পেলেও অন্যান্য কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ প্রায় নেই। সেজন্য কর্মসূচিগুলোতে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থার পরিধি বৃদ্ধি করা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, তাদের বিশেষ দক্ষতা বিবেচনা করে স্থানীয়ভাবে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা এবং বিশেষ ধরনের কর্মসূচি চালু করা যেতে পারে।
পরবর্তী মন্তব্যের জন্য আপনার নাম,ইমেইল,ওয়েবসাইট ব্রাউজারে সংরক্ষণ করুণ
সম্পাদকঃ
বিডিবিএল ভবন ( লেভেল - ৮) ১২ কারওয়ান বাজার সি/এ, ঢাকা, বাংলাদেশ।
কপিরাইট © ২০২৪ পাওয়ার্ড বাই লালসবুজের কথা